সংরক্ষিত বাণিজ্যের স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি।
সংরক্ষণঃ
সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে আমদানী ও রপ্তানীর নিয়ন্ত্রণকে সংরক্ষণ বল। সংরক্ষণের মাধ্যমে সাধারণতঃ বিশেষ বিশেষ পণ্যের আমদানী বিভিন্ন মাত্রায় নিরুৎসাহিত করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ পণ্যের রপ্তানি বিভিন্ন মাত্রায় উৎসাহিত করা হয়। শুল্ক এবং নানা রূপ অশুল্ক বাধা যেমনঃ কোটা বিনিময় নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতির মাধ্যমে আমদানী নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং রপ্তানী কর ভর্তুকির মাধ্যমে রপ্তানী নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
সংরক্ষণের স্বপক্ষে যুক্তিঃ
সংরক্ষণের স্বপক্ষে সাধারণত নিম্নলিখিত যুক্তিসমূহ দেখানো হয়ে থাকে।
ক. শিশু শিল্পের সংরক্ষণ যুক্তিঃ কোন দেশ একটি শিল্প অন্য দেশের তুলনায় দেরিতে শুরু করতে পারে। অবাধ বাণিজ্য অবস্থায় এই শিল্পটি বিদেশের সুপ্রতিষ্ঠিত এবং কম খরচে শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সক্ষম হবে না।
খ. আমদানী মূল্য হ্রাসঃ আমদানীর উপর শুল্ক আরোপ করলে এটির দাম বেড়ে যায় এবং ফলে আমদানী চাহিদা কমে যায়। কোন বড় দেশ আমদানীর উপর শুল্ক আরোপ করলে এর চাহিদা এত কমে যেতে পারে যে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম হ্রাস পেতে পারে। সুতরাং শুল্ক আরোপ করে বড় দেশ কম দামে আমদানী করতে ও কল্যাণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়।
গ. প্রতিরক্ষাঃ কোন কোন শিল্প দেশের প্রতিরক্ষার জন্য অপরিহার্য বিবেচনা করা হয়। এসব পণ্য বিদেশ থেকে কম খরচে পাওয়া যায় কিন্তু যুদ্ধকালীন সময়ে এসব পণ্যের যোগান পাওয়া দুরূহ হতে পারে। এরূপ অবস্থায় প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত শিল্পকে সংরক্ষণ দিতে হয়। তবে এসব ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষার সঙ্গে ক্ষীনতম যোগাযোগ আছে এরূপ শিল্প ও সংরক্ষণ চাইতে পারে।
ঘ. বিশেষ বিশেষ শিল্পের সংরক্ষণঃ অবাধ বাণিজ্য সমগ্র দেশের জন্য লাভজনক হলেও এর ফলে বিশেষ বিশেষ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যে সকল শিল্প সুলভ বিদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতায় হুমকির সম্মুখীন হয় সেসব শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকগণ শিল্পের সংরক্ষণ দাবি করে। সংরক্ষণের ফলে এসব শিল্প টিকে থাকতে সক্ষম হয়। মনের রাখা দরকার যে সংরক্ষণের ফলে দ্রব্যের দাম বাড়ে। ফলে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং উৎপাদন দক্ষতার ক্ষতি হয়।
ঙ. রাজস্ব উদ্দেশ্যঃ আমদানি শুল্ক সরকারের রাজস্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তবে বর্তমানে উন্নত দেশে সরকারি আয়ের অতি সামান্য অংশ বাণিজ্যের উপর আরোপিত কর থেকে আসে।
চ. অর্থনৈতিক মন্দার মোকাবেলাঃ অর্থনৈতিক মন্দার সময় দেশীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য বাণিজ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। আমদানি শুল্ক আরোপ এর ফলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়।
ছ. লেনদেনের ভারসাম্য ঘাটতি দূরীকরণঃ রপ্তানীর তুলনায় আমদানী বেশি হওয়ার ফলে একটি দেশের লেনদেনের ভারসাম্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এরূপ অবস্থায় সরকার আমদানী হ্রাস করে ঘাটতি দূর করতে পারে। তবে দেখা গেছে যে লেনদেনের ভারসাম্য ঘাটতি দূর করার জন্য অন্যান্য নীতি যেমন আর্থিক নীতি রাজস্ব বা মুদ্রার অবমূল্যায়ন অধিক কার্যকর।
জ. সস্তা বিদেশী শ্রমের সঙ্গে প্রতিযোগিতাঃ উন্নত দেশসমূহে বলা হয় যে উন্নয়নশীল দেশসমূহের শ্রম এত সস্তা যে তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে উন্নত দেশে উৎপাদিত পণ্য প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। আবার উন্নয়নশীল দেশ সমূহে বলা হয় যে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো প্রযুক্তিগতভাবে এত উন্নত যে তাদের তৈরি পণ্যের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশের পণ্য প্রতিযোগিতায় টিকবে না ।
(সংরক্ষণের বিপক্ষে যুক্তি সমূহ)
ক. বিশেষায়নের অন্তরায়ঃ সংরক্ষণের বিপক্ষে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি হলো এটি তুলনামূলক সুবিধার বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক বিশেষায়ন এর পথে বাধা স্বরূপ। যে সকল শিল্পে তুলনামূলক সুবিধা আছে শ্রম এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সেসব শিল্পে নিয়োজিত না হয়ে সংরক্ষিত শিল্পে নিয়োজিত হয়।
খ. অর্থনৈতিক দক্ষতা ক্ষতিঃ সংরক্ষণের ফলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। বেশি দামে দ্রব্য ক্রয় করতে হয় বলে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গ. দুর্বল শিল্পের অস্তিত্বঃ শিশু শিল্প প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত এটি সংরক্ষণের প্রয়োজন শিকার করা হয়। কিন্তু সংরক্ষণের সুবিধার ফলে এসব শিল্প দক্ষতা বৃদ্ধির প্রেরণা বোধ করে না।
ঘ. অন্যান্য অসুবিধাঃ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী জন্ম হয়। তারা সরকারের কাছে লবিং করে বা অসাধু পদ্ধতিতে নিজস্ব বিল্লের সংরক্ষণ নিশ্চিত করে। এর ফলে প্রকৃত সম্পদের অপচয় হয়।
আপনার প্রয়োজনীয় পোষ্ট দেখুনঃ-
Post a Comment