আমাদের এই ব্লগ সাইটের সমস্ত পোস্ট দেখতে Site Map Page দেখুন। এছাড়াও উপরে ডানপাশে সার্চ বক্সে আপনার প্রয়োজনীয় বিষয় লিখে সার্চ দিন।(ধন্যবাদ)

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা এবং লাভ কি? সংজ্ঞা

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা এবং লাভ কি? সংজ্ঞা

 এখন আলোচনা করব আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরম সুবিধা সম্পর্কে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরম সুবিধা তত্ত্ব।

দুটি দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হয়, কারণ দুটি দেশেই বাণিজ্য থেকে লাভ করে। বাণিজ্য থেকে লাভ দেখানোর জন্য ডেভিড রিকার্ডো তুলনামূলক সুবিধা তত্ত্ব প্রদান করে। যদি দুটো দেশের মধ্যে একটি দেশে একটি পণ্য এক একক উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ উপকরণ লাগে তা অন্য দেশটির তুলনায় কম হয় তাহলে প্রথমোক্ত দেশটির ওই পণ্যের পরম সুবিধা আছে বলা হয়।

আমরা দুটি দেশ বাংলাদেশ ও আমেরিকা, দুটি পণ্য, তৈরি পোশাক ও কম্পিউটার এবং একটি উপকরণ, শ্রম বিবেচনা করি। এই দুটি পণ্য উৎপাদনের প্রয়োজনীয় শ্রমের পরিমাণ নিচে সারণিতে দেখানো হচ্ছে।

প্রতি একক উৎপাদনে প্রয়োজনীয় শ্রমের পরিমাণ ।

(তৈরি পোশাক) বাংলাদেশ=২, আমেরিকা = ৪

(কম্পিউটার) বাংলাদেশ=১০, 

আমেরিকা= ৮

উপরের চকে দেখা যায় যে, এক একক তৈরি পোশাক উৎপাদনে বাংলাদেশে আমেরিকার তুলনায় শ্রম কম লাগে। ২/৪। অনুরূপভাবে এক একক কম্পিউটার উৎপাদনে বাংলাদেশের তুলনায় আমেরিকায় শ্রম কম লাগে। ১০/৮। সুতরাং বাংলাদেশের তৈরি পোশাক উৎপাদনে পরম সুবিধা এবং আমেরিকার কম্পিউটার উৎপাদনের পরম সুবিধা আছে। যদি এ অবস্থায় বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদনে এবং আমেরিকা কম্পিউটার উৎপাদনে বিশেষায়ণ করে এবং উৎপাদিত পণ্য বিনিময় করে তাহলে উভয় দেশেই লাভবান হবে। মনে করি দু'দেশের মধ্যে ১ একক কম্পিউটারের সঙ্গে ৩ একক তৈরি পোশাক বিনিময় হয়। বাংলাদেশ ৬ একক শ্রম ব্যবহার করে ৩ একক তৈরি পোশাক উৎপাদন করে এবং এর বিনিময়ে একটি কম্পিউটার পায় যা দেশে উৎপাদন করলে ১০ একক শ্রম লাগত। বাণিজ্যের ফলে বাংলাদেশের একক শ্রম বাঁচে যা সে আরো পোশাক উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারে।

অপরদিকে আমেরিকা ৮ একক শ্রম ব্যবহার করে একটি কম্পিউটার উৎপাদন করে তার বিনিময়ে তিন একক তৈরি পোশাক লাভ করে যা দেশে উৎপাদন করলে ১২ একক শ্রম লাগত। এভাবে আমেরিকার ও লাভ হয়। সুতরাং বাণিজ্যরত দুটি দেশের কোন পণ্য উৎপাদনে পরম সুবিধে থাকলে বাণিজ্য উভয় দেশের জন্য লাভজনক হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অনেকটাই পরম সুবিধার ভিত্তিতে হয়ে থাকে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে দুটি দেশের মধ্যে একটি দেশ যদি অন্য দেশের তুলনায় সকল পণ্য উৎপাদনে বেশি দক্ষ হয় তাহলে দেশ দুটির মধ্যে লাভজনক বাণিজ্য হবে কিনা?

সাধারণভাবে মনে হতে পারে যে কোন পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের শ্রমিকের তুলনায় আমেরিকার শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা এত বেশি যে বাংলাদেশের পক্ষে আমেরিকায় কোন পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব নয়। কিন্তু তুলনামূলক সুবিধা তত্ত্ব বলে যে, এরূপ অবস্থায়ও লাভজনক বাণিজ্য সম্ভব। যদিও আমেরিকার তুলনায় বাংলাদেশ প্রতিটি পণ্য উৎপাদনে পরম অসুবিধা জনক অবস্থায় আছে, বলা হয় যে এসবের মধ্যে যে পণ্যটি উৎপাদনে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম অদক্ষ সেটিতে বাংলাদেশের তুলনামূলক সুবিধা আছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য পরম সুবিধা অবশ্যই প্রয়োজনীয় নয়, যা প্রয়োজন তা হচ্ছে তুলনামূলক সুবিধা।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা এবং লাভ কি? সংজ্ঞাআন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা এবং লাভ কি? সংজ্ঞাআন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা এবং লাভ কি? সংজ্ঞা
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা এবং লাভ কি? সংজ্ঞা


তুলনামূলক সুবিধা তত্ত্ব।


সুবিধা তথ্য অনুসারে যদি প্রতিটি দেশ যে দ্রব্য তুলনামূলকভাবে কম খরচে উৎপাদন করতে পারে সে দ্রব্য উৎপাদনে বিশেষায়ন এবং তার রপ্তানি  করে তাহলে প্রতিটি দেশ উপকৃত হবে। অনুরূপভাবে যদি প্রতিটি দেশ যে দ্রব্য তুলনামূলকভাবে বেশি করেছে উৎপাদন করতে পারে সে দ্রব্য আমদানি করে তাহলে প্রতিটি দেশ উপকৃত হবে।


বাণিজ্য থেকে লাভ। 


বাণিজ্যের পূর্বে বাংলাদেশ এক একক তৈরি পোশাক উৎপাদন করতে দুই একক শ্রম লাগে, যেখানে এক একক কম্পিউটার উৎপাদন করতে ১০ একক শ্রম লাগে। সুতরাং কম্পিউটার তৈরি পোশাকের চেয়ে ব্যয় সাধ্য হবে, এক একক কম্পিউটারের খরচ ১০/২=৫ একক তৈরি পোশাকের খরচের সমান। এখন মনে করি উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য হবে। যদি বাংলাদেশ পাঁচ একক তৈরি পোশাকের কম খরচে একটি কম্পিউটার আমদানি করতে পারে তাহলে তা তার জন্য লাভজনক হবে। অনুরূপভাবে যদি আমেরিকায় একটি কম্পিউটার রপ্তানি করে বিনিময়ে দুই এককের বেশি তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে তা তার জন্য লাভজনক হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তৈরি পোশাকের সঙ্গে কম্পিউটারের বিনিময় হার দুই থেকে পাঁচ একক এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

মনে করি আন্তর্জাতিক বাজারে এক একক কম্পিউটারের বিনিময় ৩ একক তৈরি পোশাক পাওয়া যায়। এ অবস্থায় বাংলাদেশের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানি করে কম্পিউটার আমদানি করা লাভজনক হবে। বাংলাদেশ ৩ একক তৈরি পোশাক রপ্তানি করে একটি কম্পিউটার পাই কিন্তু দেশের মধ্যে একটি কম্পিউটারের জন্য তাকে ৫ একক তৈরি পোশাক ত্যাগ করতে হয়। সুতরাং আমদানীর ফলে তার 1 একক তৈরি পোশাক বাঁচে এবং এই দুই একক তৈরি পোশাক সে নিজে ভোগ করতে পারে বা এর কিছুটা রপ্তানি করে আরো কম্পিউটার আমদানি করতে পারে। উভয় ক্ষেত্রে তার মোট ভোগ বৃদ্ধি পায়। অনুরূপভাবে দেখানো যায় যে এক একক কম্পিউটার ৩ একক তৈরি পোশাক এর বিনিময় হারে বাণিজ্যের ফলে আমেরিকা ও লাভবান হয়।

সারসংক্ষেপ 

১. কোন দেশের কোন পণ্য উৎপাদনের খরচ অন্য দেশের তুলনায় কম হলে ওই পণ্যের দেশটির পরম সুবিধা আছে। পরম সুবিধার ভিত্তিতে দুটি দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হতে পারে।

২. দুটি দেশের দুটি পণ্যের উৎপাদন খরচের অনুপাতে যতক্ষণ পর্যন্ত তারতম্য থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত দেশ দুটির মধ্যে পারস্পরিক সুবিধা জনক বিশেষায়ন ও বাণিজ্য সম্ভব। তুলনামূলক সুবিধা তত্ত্ব অনুসারে বিশেষায়নের ফলে দেশগুলো তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ থেকে বেশি পরিমাণ আয় অর্জন করতে সক্ষম হয়।


















Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post