আমাদের এই ব্লগ সাইটের সমস্ত পোস্ট দেখতে Site Map Page দেখুন। এছাড়াও উপরে ডানপাশে সার্চ বক্সে আপনার প্রয়োজনীয় বিষয় লিখে সার্চ দিন।(ধন্যবাদ)

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের ভারসাম্য ও উদ্দেশ্য

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের ভারসাম্য ও উদ্দেশ্য

এই পোস্ট থেকে আপনারা জানতে পারবেন যে অন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভারসাম্য, উদ্দেশ্য, পরিসংখ্যান ভুল ত্রুটি, লেনদেনের ভারসাম্যের বিভিন্ন খাত ইত্যাদি সম্পর্কে। আপনার জ্ঞান বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই পোস্টটি পড়ুন।


 লেনদেনের ভারসাম্য কি?

 কোন দেশের লেনদেনের ভারসাম্য বলতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে, সাধারণতঃ এক বছরের, ঐ দেশের অধিবাসীদের সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অধিবাসীদের সকল প্রকার অর্থনৈতিক লেনদেনের রীতিবদ্ধ বিবরণীকে বুঝায়।
এখানে অধিবাসী বলতে শুধু ব্যক্তি বুঝায় না, সরকার এবং ফার্ম ও বুঝাই যদিও এই ফার্ম কোন বিদেশি সংস্থার শাখা হয়। 
একটি দেশের লেনদেনের ভারসাম্য হিসেবে বিদেশীদের নিকট থেকে ওই দেশের পরিশোধ ও প্রাপ্তি উভয়ই লিপিবদ্ধ করা হয়। বিদেশীদেরকে পরিশোধ করতে হয় এরূপ যে কোন লেনদেনের ভারসাম্য হিসেবে খরচ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এটি তে একটি ঋণাক্ষ চিহ্ন দেওয়া হয়। বিদেশিদের নিকট থেকে প্রাপ্তির উদ্ভব হয় এরূপ যে কোন লেনদেন জমা হিসাব অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এটিতে একটি  চিহ্ন দেওয়া হয়। 

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের ভারসাম্য ও উদ্দেশ্য
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের ভারসাম্য ও উদ্দেশ্য



#লেনদেনের ভারসাম্যের বিভিন্ন খাত 

লেনদেনের ভারসাম্য হিসেবকে কয়েকটি প্রধান খাতে ভাগ করা হয়। লেনদেনের ভারসাম্য হিসেবকে চারটি প্রদান খাতে ভাগ করা হয়েছে।
  • চলতি হিসাব,
  •  মূলধন হিসাব,
  •  পরিসংখ্যানগত ত্রুটি 
  • এবং বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের পরিবর্তন। 
চলতি হিসাবে ওই সব লেনদে অন্তর্ভুক্ত থাকে,যেগুলো চলতি আয় সৃষ্টি বা চলতি আয় খরচে সঙ্গে চলতি হিসাব সংযুক্ত। চলতি হিসাবকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, 
  • দ্রব্য বাণিজ্য, 
  • সেবা কর্মে বাণিজ্য 
  •  অপরিশোধিত হস্তান্তর।

 আন্তর্জাতিক সীমান্তে অতিক্রম করার সময় যে সকল বস্ত্র দেখা যায় এবং স্পর্শ করা যায়, দ্রব্য বাণিজ্যের মধ্যে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রপ্তানি সাধারণত, এফ ও বি ভিত্তিতে হিসাব করা হয় অর্থাৎ পরিবহন, ইন্সুরেন্স খরচ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। তবে আমদানি সিআইএফ ভিত্তিতে হিসাব করা হয় অর্থাৎ দামের মধ্যে পরিবহন, ইন্সুরেন্স খরচ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দ্রব্যের আমদানি ও রপ্তানির স্থিতিকে দৃশ্যমান বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বা দ্রব্য সামগ্রীর বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বা সংক্ষেপে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বলে।

সেবা কর্মের বাণিজ্যের মধ্যে অ- উপাদান সেবা কর্ম যেমন জাহাজ ভাঙ্গা ব্যাংকিং ও ইন্সুরেন্স সেবা পর্যটকদের ব্যয় ইত্যাদি এবং উপাদান সেবা কর্ম যেমন,সুদ, মুনাফা এবং লভ্যাংশ যা উৎপাদনের উপাদান ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়। যেহেতু সেবা কর্মের বাণিজ্য দেখা যায় না এবং স্পর্শ করা যায় না সেবা কর্মের আমদানি ও রপ্তানির স্থিতিকে দৃশ্যমান বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বলা হয়।
 একতরফা হস্তান্তর বা অপরিশোধিত হস্তান্তর বলতে একটি দেশের অধিবাসীদের ওইসব প্রাপ্তিকে বুঝায় যা তারা বিনামূল্যে পায় এবং এর প্রতিদান স্বরূপ ভবিষ্যতে কোন কিছু প্রদান করতে হয় না। যেমন বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের অর্থ প্রেরন, বৈদেশিক সরকারের কাছ থেকে বিশুদ্ধ সাহায্য ইত্যাদি। বিদেশ থেকে প্রাপ্তি ও বিদেশের প্রদানের পার্থক্য নীট অপরিশোধিত হস্তান্তর হিসেবে দেখানো হয়।
দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান বাণিজ্য ও একতরফা হস্তান্তরের স্থিতির নীট মূলকে একত্রে চলতি হিসেবের ভারসাম্য বলা হয়। 

(লেনদেনের ভারসাম্য হিসেব)
          (চলতি হিসাব) 

দেনা,-
দ্রব্য আমদানি সেবা কর্ম আমদানি নীট অপরিশোধিত হস্তান্তর।পাওনা,+
দ্রব্য রপ্তানি সেবা কর্ম রপ্তানি।

          (মূলধন হিসাব) 

দেনা,
বিদেশের পরিসম্পদের নীট বৃদ্ধি। পাওনা,
দেশে-বিদেশের পরিসম্পদের নীট বৃদ্ধিপরিসংখ্যানগত ত্রুটি বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিবর্তন।

(মূলধন হিসাব)

একটি দেশের নাগরিক বা সরকার কোন বিদেশি নাগরিক বা সরকারকে কোন ঋণদান করলে বা কোন সম্পদ ক্রয় করলে বা তাদের কাছ থেকে কোন ঋণ গ্রহণ করলে তা মূলধন হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়। বাংলাদেশ সরকার  বিদেশের কাছ থেকে এক ডলার ঋণ নিলে সরকার তাদের কাছে একটি পরিসম্পদ বিক্রয় করে ভবিষ্যতে সুদ  সহ এক ডলার পরিষদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে। এরূপ লেনদেন মূলধন হিসাবে ঋণাক্ষ ভুক্তি হিসাবে দেখা দেয় কারণ ঋণের অর্থ বাংলাদেশের পণ্য প্রাপ্তি বা মূলধনের অন্তঃপ্রবাহ। মূলধন হিসাবের লেনদেন নানারূপ হতে পারে, যেমন ব্যক্তিগত বা সরকারি লেনদেন, প্রত্যেক্ষ বিনিয়োগ বা পত্রকোষ বিনিয়োগ এবং দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বা স্বল্প মেয়াদী মূলধন। মূলধন হিসাবের সকল আদান প্রদানের নীট মূল্যকে মূলধন হিসেবে ভারসাম্য বলা হয় এবং এই ভারসাম্য  হলে নীট মূলধন অন্তঃপ্রবাহ ঘটে এবং ঋণাক্ষ হলে নিজ মূলধন বহিঃপ্রবাহ  ঘটে। 


(পরিসংখ্যান গত ভুল ত্রুটি)

লেনদেনের ভারসাম্য হিসেবে যে লক্ষ লক্ষ পৃথক লেনদেন অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেসব এর পরিপূর্ণ ও নির্ভুল হিসাব পাওয়া দূরূহ ব্যাপার। লেনদেনের হিসাব লিপিবদ্ধ করায় নানারূপ ভুলত্রুটি হয়। তথ্য পেতে অনেক সময় দেরি হয়, চোরাকারবার হয় বা অর্থ প্রদানের পরিমাণ কম করে দেখানো ইত্যাদি কারণে লেনদেনের হিসাবের দেনা ও পাওনার দিকে একেবারে সমান হয় না। এই সমতা আনার জন্য যে সমন্বয় প্রয়োজন সেটিকে পরিসংখ্যানগত ভুলত্রুটি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পরিশেষে যে দেশের লেনদেনের ভারসাম্য হিসাব বিবেচনা করা হয় সে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিবর্তন হতে পারে। মুদ্রার মজুদ তিন প্রকার হতে পারে, আমেরিকান ডলার, সোনা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ঋণকৃত এসডিআরস। মনের রাখা দরকার যে মুদ্রার মজুদ দেশের অভ্যন্তরে রাখা প্রয়োজনীয় নয়। অধিকাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের মজুদের কিছু অংশ বিদেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে জমা রাখে। লেনদেনের হিসাবের অন্যান্য সকল দফার নীট মূল্যে প্রতিফলন ঘটে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিবর্তনে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিবর্তন এবং অন্যান্য অন্তর্ভুক্ত দফার নীট মূল্যের মধ্যে যে তারতম তাই পরিসংখ্যানগত ভুল ত্রুটি হিসেবে সনাক্ত করা হয়। লেনদেনের ভারসাম্যের হিসাব এমনভাবে করা হয় যে এই চারটি দফার যোগফল শূন্য হয়।

(বাণিজ্যের ভারসাম্য) 

দ্রব্যের আমদানিকৃত রপ্তানির নীট মুলোকে বাণিজ্যের ভারসাম্য বলা হয়। আমরা জানি যে লেনদেনের ভারসাম্য একটি দেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশে দ্রব্য, সেবা কর্ম, এক পাক্ষিক হস্তান্তর পরিসম্পদের লেনদেনের বিবরণ দেয়। সুতরাং বাণিজ্যের ভারসাম্য একটি দেশের আন্তর্জাতিক আংশিক চিত্র দেয়। তবুও বাণিজ্যের ভারসাম্যের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয় বিশেষত দেশের সংবাদ মাধ্যমে এটির উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয় । প্রচার মাধ্যমে গুরুত্ব পাওয়ার একটি কারণ অবশ্যই দ্রব্যের আমদানী ও রপ্তানী সংক্রান্ত উপাত্ত  তুলনামূলকভাবে সহজে পাওয়া যায়।

(সারসংক্ষে

১.লেনদেনের ভারসাম্য একটি দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং আর্থিক লেনদেনের বার্ষিক হিসাব বিবরণী। রপ্তানীকে পাওনা এবং আমদানীকে দেনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

২. লেনদেনের ভারসাম্যের প্রধান অংশগুলো হচ্ছেঃ 

ক. চলতি হিসাব 

খ. মূলধন হিসাব

 গ. পরিসংখ্যানগত হিসাব 

ঘ. বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের  পরিবর্তন।

লেনদেনের ভারসাম্য হিসেবের নিয়ম অনুসারে এই চারটি দফার যোগফল শূন্য হবে। 

৩. বাণিজ্যের ভারসাম্যের অবস্থা বিশ্লেষণের সময় সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। বাণিজ্যের ভারসাম্যের ঘাটতি খারাপ চোখে দেখা হয়। তবে দেশের বিনিয়োগ চাহিদা বৃদ্ধির ফলে আমদানী চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং ফলে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।



আরো  প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে জানুন 👇👇👇


শব্দ কাকে বলে? শব্দ কত প্রকার ও কি কি উদাহরণস্বরূপ  


আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা এবং লাভ কি?সংজ্ঞা 


অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাকে বলে? বিস্তারিত আলোচনা 


আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাকে বলে? সংজ্ঞা ও গুরুত্ব




Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post